Social Icons

twitterfacebookgoogle pluslinkedinrss feedemail

Pages

বাংলাদেশের আকাশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্হা "র" (RAW) -এর কালো ছায়া, আমরা কি সচেতন? কতটুকু সচেতন?

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি অংশ অভ্যূথানের চেষ্টা করছে বলে আমরা
সেনাসদরের একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জেনেছি। যদিও গত ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে ফেসবুকের কল্যানে আমরা বিভিন্ন নোটের মাধ্যমে এর কিছুটা জানতে পেরেছিলাম। মেজর জিয়াউল হকের একটি ই-মেইল তার একজন ঘনিষ্ট মানুষ ফেসবুক সহ বিভিন্ন জায়গায় পোস্ট করেছিলেন, সে সুবাধেই আমরা সেনাবাহিনীর বিভেদ সম্বন্ধে কিছুটা ধারণা পেয়েছিলাম। যদিও তার সত্য-মিথ্যা যাচাই করা সম্ভব ছিল না। আপনারা যারা এর আগে মেজর জিয়াউল হকের ই-মেইলটি পড়েননি, তারা নিচের এই See The Link  গিয়ে পড়ে আসতে পারেন:




সেই ই-মেইলটিতে মেজর জিয়াউল হক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ভারতের গোয়েন্দা সংস্হা RAW(Research and Analysis Wing) র'-এর অনুপ্রবেশের কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তাঁকে অপহরণ করার পর গোপন জিজ্ঞাসাবাদের সময় ডিজিএফআই-এর পাশাপাশি র' এর গোয়েন্দারাও সেখানে উপস্হিত ছিলেন এবং তারাও তাঁকে দোভাষীর সাহায্যে জেরা করেছিলো। মেজর জিয়ার ভাষ্য মতে, ''র’এর এজেন্টরা যখন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের পাশে বসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন মেজরকে জেরা করতে পারে তখন নিশ্চিত বোঝা যায় ডিজিএফআই এখন চালাচ্ছে ভারতীয় সরকার।'' মেজর জিয়ার ভাষ্যমতে, এরা সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের কেন্দ্রীয় এবং ৬৪টি জেলাভিত্তিক ফিল্ড অফিসের মেধাবী অফিসারদের ব্যবহার করে এক-এগারোর মত আরেকটি অবস্থা সৃষ্টির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। র’এর সাথে হাত মিলিয়েছে কিছু উচ্চাভিলাষী জেনারেল। এরা বর্তমান শাসক দলকে মদদ দেয়ার ভান করছে কিন্তু যখন এদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে তখন খোদ সরকারী দলের অনেক বড় নেতাদের নির্মূল করা হবে।''
এ ঘটনা যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রটির জন্য তা এক ভয়াবহ অশনি সংকেত।

বেশ কয়েকবছর আগে ভারতের গোয়েন্দা সংস্হা র' নিয়ে আমাদের দেশে একটি বই বেরিয়েছিলো। বইটির মাধ্যমে না জানা অনেক চাঞল্যকর তথ্য সেসময় আমরা পেয়েছিলাম।
বইটির নাম ''বাংলাদেশে র''। এর লেখকের নাম সাবেক সেনাসদস্য ও বাংলাদেশ ডিফেন্স জারনাল এর সম্পাদক লে. (অব) আবু রুশদ।
এই বইটিতে লেখক এমন অনেক তথ্য আমাদের জানিয়েছেন, যার মাধ্যমে নতুন করে আমরা চিন্তার খোরাক(পড়ুন দূঃচিন্তার খোরাক) পায়। ওনার দেয়া সেই চাঞল্যকর তথ্যগুলো আজ আবার আমাদের মাঝে সত্য হয়ে ঘুরে-ফিরে আসছে।

তাই সেই চাঞল্যকর বইটির কিছু তথ্য আজ আপনাদের সামনে উপস্হাপন করার লোভ আমি সামলাতে পারছি না। আমি এখন বইটির কিছু তথ্য লেখকের ভাষায় হুবহু আপনাদের সামনে উপস্হাপন করব। তিনি লিখেছেন:
''যেহেতু আমি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান গোয়েন্দা সংগঠন 'ডিজিএফআই' তথা প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি, সেহেতু এ দেশের বুকে র'-এর অপতৎপরতা সম্পর্কে আমার অল্প-বিস্তর ধারণা রয়েছে। অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে স্বাধীন এ দেশে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে বৈরী গুপ্তচর সংস্হার কার্যক্রম সম্পর্কে এ দেশের প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিককে অবশ্যই অবহিত ও সচেতন থাকতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সহায়তা করেছে বলে তাদের পরবর্তী সকল কার্যক্রমকে বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূল বলে মনে করার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। বরং একটি আত্মমর্যাদা বোধসম্পন্ন জাতি হিসেবে আমাদের নিরাপত্তার জন্য আমাদেরকেই ভাবতে হবে। আর তাই স্হায়ী ভাবে কাউকে আমাদের শত্রু বা মিত্র বলে জ্ঞান করার কোনো অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি না। আজ যে আমাদের পরম মিত্র, পরিবর্তিত অবস্হার পরিপ্রেক্ষিতে কাল সে ঘোরতর শত্রু বলে পরিগণিত হতে পারে। আধুনিক বিশ্বে এ ধরনের নজির বিরল নয়।''

তিনি তাঁর বইটিতে বাংলাদেশে র' এর অপকীর্তি সম্বন্ধে যেসব কথা উল্লেখ করেছেন, যা আমাদের ব্যপক ভাবে দূশ্চিন্তাগ্রস্হ করে। তিনি র'-এর সেসব অপকীর্তি তালিকা আকারে সে বইতে উল্লেখ করেছেন:
১)পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিবাহিনী গঠন করে যাবতীয় উপায়ে শান্তিসেনারা প্রশিক্ষণ ও সমরাস্ত্র সরবরাহ করেছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শান্তিসেনারা ২৫ বছর যুদ্ধ করেছে। বহু অন্যায় দাবীতে তারা বিদ্রোহ করেছে এবং বাংগালীদের হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতাসীন হয়ে তাদের সকল দাবী মেনে নিয়ে বাংগালীদের নিজ দেশে পরবাসী বানিয়ে দিয়েছে।

২)প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হত্যা: লেখক অনেক তথ্য-প্রমান দিয়ে উল্লেখ করেছেন, ভারত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী শক্তিকে হটিয়ে একটি বন্ধুভাবাপন্ন শক্তিকে ক্ষমতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। জিয়া হত্যার মাত্র ১২ দিন পূর্বে শেখ হাসিনা ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসে। জিয়া হত্যার খবর পেয়ে শেখ হাসিনা ব্রাক্ষণবাড়িয়া সীমান্ত দিয়ে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সীমান্তরক্ষী বাহিনীরা বাধ সাধায় তিনি সে যাত্রায় পার হতে পারেন নি।

৩)স্বাধীন বঙ্গভূমি আন্দোলন: ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করেছেন। পরের দিনই 'স্বাধীন বঙ্গভূমি' নামে পৃথক হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষনা করা হয়েছিলো। একসময়কার আওয়ামীলীগ নেতা ডঃ কালীদাস বৈদ্য 'বঙ্গসেনা' নামে একটি সশস্ত্র বাহিনীও গড়ে তুলেছিলেন। খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা নিয়ে এই হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চালানো হয়েছিলো। এটার পেছনেও র' এর হাত ছিল।

৪)বাংলাদেশ সরকারের ভেতরে-বাহিরে ৩০হাজার র'-এর এজেন্ট তৎপর শিরোনামে তিনি লিখেছেন, '' মন্ত্রী, এমপি, আমলা, রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবি, লেখক, কবি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিল্পী, প্রকাশক, অফিসার, কর্মচারী পর্যায়ের লোকজনই শুধু নয়। ছাত্র, শ্রমিক, কেরানী, পিওন, রিক্সাওয়ালা , ঠেলাওয়ালা, কুলি, টেক্সিড্রাইভার, ট্রাভেল এজেন্ট, ইন্ডেটিং ব্যবসায়ী, সিএন্ডএফ এজেন্ট, নাবিক, বৈমানিক, আইনজীবি সহ বিভিন্ন স্তরে তাদের এজেন্ট সক্রিয় রয়েছে।''

৫)ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি: এ কমিটির পেছনেও র'-এর হাত রয়েছে বলে লেখক তাঁর বইতে উল্লেখ করেছেন:
''১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবি, সংস্কৃতিকর্মী এমন প্রচার-প্রচারণা করে দেন যে, জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে সরকার গঠন করে বিএনপি স্বাধীনতার চেতনা বিসর্জন করে দিয়েছ্বে এবং জামায়াতই হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র সমস্যা। এদের প্রচারণা এতটাই সমন্বিত ও সর্বোব্যাপি ছিল যে, সরকারও এক পর্যায়ে ঘাবড়ে যায়। ভাবতে থাকে, না জানি কে কি মনে করছে? ফলশ্রূতিতে বিএনপির দোদূল্যমান নেতৃত্ব ২৪মার্চ '৯২ তারিখে সবাইকে অবাক করে দিয়ে জামায়াতের আমীর জনাব গোলাম আযমের নাগরিকত্ব বাতিলের পাশাপাশি তাঁকে গ্রেফতার করে জেল-হাজতে প্রেরণ করে। এর মাত্র ২ দিন পর ২৬শে মার্চ আনুষ্টানিকভাবে গঠিত হয় ঘাদানিক। জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে এ কমিটি কাদের সহায়তায়, কোন্‌ সূ্ত্রে প্রাপ্ত অর্থে দেশব্যাপি ব্যপক প্রচারনাযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল তা বিবেচনায় না এনেও বলা যায় শুধু বিএনপিকে বিপদে ফেলা এবং জামায়াতের কাছ থেকে বিএনপিকে আলাদা করে রাজনৈতিকভাবে দূর্বল করে দেয়ায় ছিল এ আন্দোলনের লক্ষ্য। এ যুক্তির সপক্ষে বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ উপস্হাপনের প্রয়োজন নেই। শুধু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ১৯৯৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যূতে সৃষ্ট আন্দোলনে জামায়াত আওয়ামী লীগের শরীকে পরিণত হওয়ার সাথে সাথে এ ঘাদানিক কমিটির সকল দাবী হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। তাই তারা একসময় গণ-আদালত গঠন করে গোলাম আযমের ফাঁসী দাবী করলেও আওয়ামী লীগ-জাপা-জামায়াত জোট গঠনের পর একটি বারের জন্যও সে ফাঁসির রায় কার্যকর করার একটি টুঁ শব্দও তারা করেনি। একদিকে ঘাদানিক গঠন ও এর উদ্দেশ্য যে ঘাতকদের বিচার নয় ভিন্ন কিছু ছিলো সে ব্যাপারে ঘটনা বিশ্লেষন করে দেখা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে কর্ণেল কাজী নুরুয্‌যামানের উৎসাহে ক'জন মুক্তিযোদ্ধা '৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও প্রতিরোধকল্পে একটি কমিটি গঠনের উদ্যেগ নেয়, এদের বেশিরভাগই সরাসরি আওয়ামীলীগ বা অন্য কোনো বুর্জোয়া দলের সদস্য বা সমর্থক ছিল না। জানা যায়, আলাপ-আলোচনার পর আলোচ্য কমিটি নাম রাখার সিদ্ধান্ত হয় 'ঘাতক-দালাল প্রতিরোধ কমিটি'। এটি '৯১ সালের ডিসেম্বরের কথা। মাঝে লে. কর্ণেল নুরুয্‌যামানের ঘনিষ্ট এক বিশিষ্ট সাংবাদিক হুট করে এই কমিটির নাম থেকে 'প্রতিরোধ' শব্দ বাদ দিয়ে 'নির্মূল' শব্দ ব্যবহারের কথা বলেন। এরপর কোথা গিয়ে কি হলো, স্রোতের মতো এগিয়ে এলেন জাহানারা ইমাম সহ অসংখ্য ভারতপন্হি ব্যাক্তি। নির্দলীয় মুক্তিযোদ্ধাদের আইডিয়া পরিবর্তিত আকারে হাইজ্যাক হয়ে গেল, কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগে সুযোগ বুঝে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ববৃন্দ ভাগ বসালো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্টার আন্দোলনে। কিন্তু যখন পারপাস সার্ভ হয়ে গেলো, তখন 'ঘাতক জামায়াতই' আবার হয়ে গেলো 'মুক্তিযুদ্ধ আন্দোলনের সাথী'। এরপর ১৯৯৯ সালে ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত এই ঘাদানিক-এর কোনো সাড়া-শব্দ ছিলো না। বিএনপি-জাপা-জামায়াতে ইসলামী ঐক্যজোট একজোট হওয়ার আগ মুহুর্তে আবার চারদিকে 'ঘাতকদের ষড়যন্ত্র' খুঁজে পায় ঘাদানিক। অথচ ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে তাদের পছন্দনীয় সরকার ক্ষমতায় আসার পর একবারও 'ঘাতক গোলাম আযমের' ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবী জানায়নি ঘাদানিক নেতৃবৃন্দ। এ থেকেই কি বোঝা যায় না, কী উদ্দেশ্যে, কাদের স্বার্থে ও কাদের বিরোধিতা করার জন্য এ কমিটির সৃষ্টি?''

উপরে উল্লেখিত মেজর জিয়াউল হক এবং লে. (অব) আবু রুশদ-এর ঘটনা গুলো পর্যালোচনা করে বোঝা যায়, আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশে ভারত তার গোয়েন্দা সংস্হা র' এর মাধ্যমে সেনাবাহিনী সহ বিভিন্ন সেক্টরে কল-কাঠি নাড়ছে। ভারত তার পছন্দের এবং সমর্থনপুষ্ট ব্যাক্তি ও গোষ্টী দ্বারা বাংলাদেশে এক মহা বিপর্যয় ঘটাতে চাচ্ছে। ৪০ বছর হয়েছে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। বিগত যেকোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হিংসা-বিদ্বেস চরম আকারে ধারন করেছে। যার পরিণাম এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ।
আমাদের অজান্তে দেশে যেকোন সময় এমন বিপর্যয় নেমে আসতে পারে, যখন আমাদের আর কিছুই করার থাকবে না। তাই নিজেদের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এখন সময়ের দাবী। কে দেশ-প্রেমিক আর কে দেশ-দ্রোহী, এই বাছ-বিচার ত্যাগ করে নতুন উদ্যমে দেশের গণতণ্ত্রকে এক নতুন দিগন্তে নিয়ে যাওয়ায় এখন আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন, আমিন।
See The Link